ঢাকা, বাংলাদেশ: এলপিজি গ্যাসের দাম ৩ টাকা কমেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জ্বালানি খাতে এলপিজি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ছিল এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। প্রায় প্রতি মাসেই বাড়তে থাকা এই অপরিহার্য রান্নার গ্যাসের দাম সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ফেলছিল মারাত্মক প্রভাব। এমন এক পরিস্থিতিতে, গত সপ্তাহে যখন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘোষণা করলো যে, ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম মাত্র ৩ টাকা কমানো হয়েছে, তখন ভোক্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যেখানে অনেকেই এই সামান্য মূল্যহ্রাসকে ‘লোক দেখানো’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এলপিজি গ্যাসের দামে সামান্য মূল্যহ্রাস, বড় প্রশ্ন
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের নতুন দাম এখন ১ হাজার ২৪২ টাকা (আগের দাম ছিল ১ হাজার ২৪৫ টাকা)। মাত্র ৩ টাকা কমানোকে সাধারণ মানুষ কীভাবে দেখছে? ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা গৃহিণী শাহানা বেগম বলেন, “মাস শেষে ৩ টাকা কমে কি আর হয়? গত এক বছরে যে হারে গ্যাসের দাম বেড়েছে, সেখানে এই ৩ টাকা কমানোটা আমাদের সাথে এক ধরনের মশকরা ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য রান্নার গ্যাস এখন বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” একই সুর শোনা গেল চট্টগ্রাম, খুলনা এবং অন্যান্য শহরগুলোর ভোক্তাদের কণ্ঠেও। তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বাড়ে, তখন দেশে দ্রুত দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু দাম কমলে তার সুফল পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে এবং তা হয় খুবই নগণ্য।
কেন এলপিজির দাম কমছে না?
বাংলাদেশ মূলত বিদেশ থেকে এলপিজি আমদানি করে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেল ও এলপিজি গ্যাসের মূল্য, ডলারের বিনিময় হার, পরিবহন খরচ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শুল্ক ও ভ্যাট—এই সবকিছুই এলপিজির চূড়ান্ত মূল্যে প্রভাব ফেলে। বিইআরসি সাধারণত সৌদি আরামকোর প্রোপেন ও বিউটেন গ্যাসের মিশ্রণ (সিপিএল) এর উপর ভিত্তি করে স্থানীয় বাজারে মূল্য নির্ধারণ করে থাকে।
গত ১০ বছরের এলপিজি গ্যাসের দামের চিত্র
বছর | প্রতি সিলিন্ডারের আনুমানিক মূল্য (১২ কেজি) | মন্তব্য |
---|
দ্রষ্টব্য: এই মূল্যগুলো বার্ষিক গড় এবং আনুমানিক। মাসিক ভিত্তিতে এলপিজি গ্যাসের দামে পরিবর্তন আসে। সূত্র – ইন্টারনেট, উইকি, পেট্রোবাংলা।
জ্বালানি খাতের ভোক্তাদের দাবি ও সামনের চ্যালেঞ্জ
সাধারণ মানুষ চায়, এলপিজি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতা আসুক। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে যেন দেশের বাজারেও দ্রুত এবং আনুপাতিক হারে দাম কমানো হয়। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে শুধু রান্নার খরচই বাড়ে না, এর প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়ে যায়, যা সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তোলে।
সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো, একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার সাথে তাল মিলিয়ে চলা, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। এলপিজি গ্যাসের দামের এই চড়াই-উতরাই সাধারণ মানুষের মনে যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, তা নিরসনে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
তথ্যসূত্রঃ
বিস্তারিত আরো জানার জন্য ভিজিট করুন “ই-২৪ঘন্টা“