মেরিনা তাবাশ্যুমের মুকুটে ফের আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার, অভিনন্দনে অধ্যাপক ইউনূস
মেরিনা তাবাশ্যুম, একজন বাংলাদেশি স্থপতি, যিনি স্থাপত্যের জগতে নিজের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো মর্যাদাপূর্ণ আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার অর্জন করে দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন। এবারের পুরস্কারটি তিনি পেয়েছেন তাঁর ডিজাইন করা ‘খুদি বাড়ি’র জন্য। এই বাড়িটি মূলত নদীভাঙনে বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা স্বল্প ব্যয়ে নির্মাণযোগ্য, পরিবেশবান্ধব এবং সহজে স্থানান্তর করা যায়। মেরিনা তাবাশ্যুমের এই অসাধারণ কৃতিত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মেরিনা তাবাশ্যুমের এই পুরস্কার প্রাপ্তি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পের জন্য একটি বড় অর্জন। এর আগে ২০১৬ সালে বায়তুর রউফ মসজিদের নকশার জন্য তিনি প্রথমবার এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার স্থাপত্যের উৎকর্ষ এবং সমাজের উপর তার ইতিবাচক প্রভাবের স্বীকৃতি স্বরূপ দেওয়া হয়।
‘খুদি বাড়ি’: একটি আশ্রয়, একটি স্বপ্ন
‘খুদি বাড়ি’ মেরিনা তাবাশ্যুমের একটি ব্যতিক্রমী এবং মানবিক স্থাপত্য প্রকল্প। এটি এমন একটি আশ্রয়স্থল যা নদীভাঙনের শিকার হওয়া মানুষগুলোর জন্য নির্মিত হয়েছে। এই বাড়িটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে এটি খুব সহজেই স্থানান্তর করা যায়। এর নির্মাণ খরচ কম এবং স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, যা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে না।
নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি নিয়মিত ঘটনা। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। তাদের জন্য একটি স্থায়ী এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে বের করা একটি কঠিন কাজ। এই প্রেক্ষাপটে ‘খুদি বাড়ি’ একটি আশার আলো হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি শুধু একটি থাকার জায়গা নয়, এটি বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর জন্য একটি নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ।
মেরিনা তাবাশ্যুম: স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
মেরিনা তাবাশ্যুম বাংলাদেশের স্থাপত্য জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ঢাকাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্যে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্থাপত্য চর্চার সাথে জড়িত। তাঁর কাজের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মেরিনা তাবাশ্যুমের ডিজাইন করা প্রতিটি স্থাপত্যই যেন এক একটি গল্প বলে। তিনি প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক, সমাজের চাহিদা এবং পরিবেশের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে কাজ করেন। তাঁর কাজের মাধ্যমে তিনি স্থাপত্যকে শুধুমাত্র একটি কাঠামো হিসেবে নয়, বরং মানুষের জীবনযাত্রার একটি অংশ হিসেবে তুলে ধরেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মেরিনা তাবাশ্যুমকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “মেরিনা তাবাশ্যুমের এই অর্জন দেশের জন্য গর্বের বিষয়। ‘খুদি বাড়ি’র মতো পরিবেশবান্ধব এবং মানবিক স্থাপত্য বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” তিনি আরও বলেন, “মেরিনা তাবাশ্যুমের কাজ তরুণ স্থপতিদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁর সৃজনশীলতা এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রশংসার যোগ্য।”
মেরিনা তাবাশ্যুমের এই পুরস্কার প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে মানুষের জন্য সুন্দর এবং কার্যকরী স্থাপত্য তৈরি করা সম্ভব। তাঁর কাজ বিশ্বব্যাপী স্থাপত্য শিল্পের মানকে আরও উন্নত করবে এবং অন্যদেরকেও অনুপ্রাণিত করবে।
আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার: মানবতার সেবায় স্থাপত্য
আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার শুধুমাত্র একটি পুরস্কার নয়, এটি মানবতার সেবায় স্থাপত্যের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। এই পুরস্কার সেইসব স্থাপত্য প্রকল্পকে সম্মানিত করে, যেগুলো মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, পরিবেশের সুরক্ষা এবং স্থানীয় সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (AKDN) ১৯৭৭ সালে এই পুরস্কারটি প্রতিষ্ঠা করে। প্রতি তিন বছর পর পর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কারের লক্ষ্য হল মুসলিম বিশ্বের সমসাময়িক স্থাপত্যকলার উন্নয়ন এবং স্থাপত্যকলার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নকে উৎসাহিত করা।
মেরিনা তাবাশ্যুম দ্বিতীয়বারের মতো এই পুরস্কার অর্জন করে বুঝিয়ে দিলেন যে, বাংলাদেশের স্থপতিরা বিশ্বমানের কাজ করতে সক্ষম। তাঁর এই সাফল্য দেশের তরুণ স্থপতিদের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
পরিশেষে বলা যায়, মেরিনা তাবাশ্যুমের এই অভাবনীয় সাফল্য শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে স্থাপত্য শিল্পের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। তাঁর কাজের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, স্থাপত্য শুধু ইমারত তৈরি নয়, এটি মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সহজ করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
তথ্যসূত্রঃ
আগা খান অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় মেরিনা তাবাসসুমকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন।
বিস্তারিতঃ ভিজিট করুন ...২৪ঘন্টা।