ফুচকা-ঝালমুড়ি, রিকশায় ঘোরাঘুরি— ঢাকার সংস্কৃতি ও স্বাদের খোঁজে হানিয়া আমির
পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হানিয়া আমির, গত সপ্তাহে ঢাকা সফরে এসেছেন। এখানে ঢাকা শহরের সংস্কৃতি আর খাবারের স্বাদ খুব ভাল লেগেছে। ফুচকা-ঝালমুড়ির মতো মুখরোচক খাবার থেকে শুরু করে রিকশার টুংটাং শব্দ, সবকিছুতেই যেন তিনি খুঁজে পেয়েছেন ঢাকার এক ভিন্ন রূপ। তার এই সফর যেন ঢাকার ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এক মেলবন্ধনকে তুলে ধরেছে। এই লেখায় আমরা হানিয়া আমিরের ঢাকা সফরের কিছু বিশেষ মুহূর্ত, তার ভালো লাগা এবং ঢাকার সংস্কৃতির প্রতি তার মুগ্ধতা নিয়ে আলোচনা করব।
ঢাকার সংস্কৃতিতে হানিয়া আমির: এক ঝলক
হানিয়া আমির শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি একজন ভ্রমণপ্রিয় মানুষও। বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানো এবং সেখানকার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা তার নেশা। তাই যখন তিনি ঢাকা আসার সুযোগ পেলেন, তিনি এক মুহূর্তও দেরি করেননি। ঢাকায় পা রাখার পর থেকেই তিনি এখানকার মানুষের আন্তরিকতা আর ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে যান।
ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর সময় হানিয়া আমির ফুচকা, ঝালমুড়ি, এবং অন্যান্য স্থানীয় খাবার চেখে দেখেন। তিনি জানান, এই খাবারগুলোর স্বাদ তাকে যেন অন্য এক জগতে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে ফুচকার টক-ঝাল স্বাদ তার মন জয় করে নিয়েছে। শুধু খাবার নয়, ঢাকার রিকশা ভ্রমণও তার কাছে একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। রিকশায় চড়ে শহরের অলিগলি ঘুরে বেড়ানোর সময় তিনি ঢাকার জীবনযাত্রা খুব কাছ থেকে দেখেছেন।
রিকশায় ঘোরাঘুরি: হানিয়ার চোখে ঢাকা
আধুনিক ঢাকার একটি প্রতীক হল রিকশা। রিকশায় চড়ে ঢাকার অলিগলি, ঐতিহাসিক স্থান এবং বিভিন্ন স্থাপত্য দেখতে তার খুব ভালো লেগেছে।
তিনি বলেন, “রিকশায় চড়ে ঢাকা শহরটাকে অন্যরকম লাগে। মনে হয় যেন কোনো এক পুরোনো শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। রিকশার টুংটাং শব্দ আর চারপাশে মানুষের কোলাহল— সব মিলিয়ে দারুণ এক অভিজ্ঞতা।”
হানিয়া আমির পুরাতন ঢাকার সরু রাস্তাগুলোতে রিকশায় ঘোরার সময় স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলেন এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। তিনি বুঝতে পারেন, ঢাকার মানুষ তাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে কতটা ভালোবাসে।
হানিয়া আমিরের চোখে ঢাকার সংস্কৃতি
হানিয়া আমির ঢাকার সংস্কৃতি দেখে মুগ্ধ। তিনি মনে করেন, ঢাকার সংস্কৃতিতে আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের এক সুন্দর মিশ্রণ রয়েছে। একদিকে যেমন আধুনিক স্থাপত্য, শপিং মল এবং আধুনিক জীবনযাত্রা রয়েছে, তেমনই অন্যদিকে রয়েছে ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির, পুরনো বাড়ি এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার।
হানিয়া আমির ঢাকার মানুষের আন্তরিকতা এবং ভালোবাসার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “ঢাকার মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ। তারা সবসময় হাসিমুখে কথা বলে এবং সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকে।”
ঢাকার সংস্কৃতি ও স্বাদ নিয়ে হানিয়ার অনুভূতি
হানিয়া আমির ঢাকা সফর শেষে তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “ঢাকা একটি অসাধারণ শহর। এখানকার সংস্কৃতি, খাবার এবং মানুষের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি অবশ্যই আবার ঢাকাতে ফিরে আসতে চাই।”
হানিয়া আমির মনে করেন, ঢাকার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। তিনি বলেন, “ঢাকার ঐতিহাসিক স্থানগুলোর সংরক্ষণ করা উচিত, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই শহরের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে।”
হানিয়া আমিরের ঢাকা সফর শুধুমাত্র একটি বিনোদনমূলক ভ্রমণ ছিল না, এটি ছিল ঢাকার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার প্রকাশ। তিনি তার এই সফরের মাধ্যমে ঢাকার সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন।
হানিয়া আমিরের এই ঢাকা সফর নিঃসন্দেহে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। তার চোখে ঢাকার সৌন্দর্য এবং এখানকার মানুষের ভালোবাসার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ।
হানিয়া আমিরের জীবন ও ক্যারিয়ার
হানিয়া আমির ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি FAST-NUCES এ পড়াশোনা শুরু করলেও পরে পড়াশোনা ছেড়ে অভিনয়কে বেছে নেন। উনাদের পরিবারের আদি নিবাস ইসলামাবাদের পাশের পাহাড়ি অঞ্চল বিখ্যাত মারি। মারি পাকিস্তানের জনপ্রিয় পর্যটন শহর, যা সুউচ্চ পাহাড়, প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত এবং এটি একটি ঐতিহাসিক স্থানও। শীতকালে এখানে প্রচুর বরফ পড়ে।

তার মিডিয়ায় যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কমেডি ফিল্ম “জানান” দিয়ে। এই সিনেমাতেই তিনি প্রথম বড় পর্দায় কাজ করেন।
২০১৭ সালে তিনি টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। তার প্রথম দিকের কাজের মধ্যে “তিতলি” এবং “ফির ওহি মহব্বত” উল্লেখযোগ্য। এখানে তার অভিনয় সমালোচক ও দর্শকের প্রশংসা কুড়ায়। ফির ওহি মহব্বত নাটকে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি হাম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট টেলিভিশন সেনসেশন (ফিমেল) জেতেন।
জনপ্রিয়তা পাওয়া সিনেমা ও টেলিফিল্ম
- না মালুম আফরাদ ২ (২০১৭)
- পরওয়াজ হ্যায় জুনুন (২০১৮)
- টেলিফিল্ম পিয়ার কাহানি (২০১৯)
নাটকে বড় সাফল্য
- আনা (২০১৯): এখানে তিনি শুধু অভিনয়ই করেননি, নাটকের থিম সং-ও গেয়েছেন।
- ইশকিয়া (২০২০): রোমাইসা চরিত্রে তার অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়।
- মেরে হমসফর (২০২২): এই নাটক দেশ-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং তাকে আরও আলোচনায় আনে।
- সাম্প্রতিক জনপ্রিয় নাটকগুলো হলো মুঝে পেয়ার হুয়া تھا (২০২৩) এবং কভি ম্যায় কভি তুম (২০২৪)।
অন্যান্য কাজ ও জনপ্রিয়তা
- সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ভক্তসংখ্যা বিপুল। ইনস্টাগ্রামে ১৫ মিলিয়নের বেশি ফলোয়ার রয়েছে।
- তিনি ফ্যাশন শো, ফটোশুট ও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও কাজ করেছেন (যেমন Maybelline, Sprite)।
পুরস্কার
- হাম অ্যাওয়ার্ড: সেরা টেলিভিশন সেনসেশন।
- লাক্স স্টাইল অ্যাওয়ার্ডস এ একাধিকবার মনোনয়ন।
- ARY Film Award অর্জন করেছেন।
🎬 হানিয়া আমিরের সিনেমার তালিকা: বছর, আয়, লাভ ও নায়ক সহ
সিনেমার নাম | সাল | নায়ক / সহ অভিনেতা | বক্স অফিস আয় | রেটিং |
---|---|---|---|---|
জানান | ২০১৬ | বিলাল আশরাফ, আলী রহমান খান | প্রায় ৩০০ মিলিয়ন PKR। বাজেট ছিল ~১১০ mPKR | IMDb 6.8/10 |
না মালুম আফরাদ ২ | ২০১৭ | ফাহাদ মুস্তাফা, জাভেদ শেখ, মোহসিন আব্বাস হায়দার | প্রায় ২১০ মিলিয়ন PKR | IMDb/RT তে সীমিত রিভিউ, তবে দর্শকপ্রিয় |
পরওয়াজ হ্যায় জুনুন | ২০১৮ | আহাদ রাযা মীর, হামজা আলি আব্বাসি | পাকিস্তানের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা | দর্শকপ্রিয়, ইতিবাচক রিভিউ |
লোড ওয়েডিং | ২০১৮ | ফাহাদ মুস্তাফা, মেহবিশ হায়াত | প্রথম ৪ দিনে ৬৫ mPKR। লাভ সীমিত | সমালোচনায় প্রশংসিত |
পরদে মে রহনে দো | ২০২২ | আলী রহমান খান | প্রায় ৫০ মিলিয়ন PKR। মাঝারি সাফল্য | সামাজিক রোমান্টিক কমেডি, প্রশংসিত |